বলিউডের সুপারহিট সিনেমা ‘পাঠান’ বাংলাদেশে মুক্তি নিয়ে নানাবিধ আলোচনা ও সমালোচনা চলছেই। অনেকেই বলছেন শিগগিরই এদেশে মুক্তি পাচ্ছে এ সিনেমাটি।
আবার দেশের প্রেক্ষাগৃহে হিন্দি সিনেমার মুক্তির বিরোধিতা করে মুখ খুলেছেন অনেকেই।
তবে বাংলাদেশে আর মুক্তি পাচ্ছে না ‘পাঠান’ সিনেমাটি। বিষয়টি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র ঢাকাপ্রকাশ-কে নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, পাঠান মুক্তির প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতি আদেশ অনুযায়ী উপমহাদেশীয় ভাষায় তৈরি করা চলচ্চিত্র বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের অনুমোদন দেওয়ার সুযোগ নাই।
অবশ্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতি আদেশের ৩৬ অনুচ্ছেদের ‘ক’তে বলা হয়েছে-ইংরেজি ভাষায় প্রস্তুতকৃত চলচ্চিত্র কোনো প্রকার সাবটাইটেল ব্যতীত এবং উপমহাদেশীয় ভাষা ব্যতীত অন্যান্য ভাষায় প্রস্তুতকৃত চলচ্চিত্র বাংলা ও ইংরেজি সাবটাইটেলসহ তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি সাপেক্ষে আমদানি করা যাইবে।
অনুচ্ছেদের ‘খ’তে বলা হয়েছে-উপমহাদেশীয় ভাষায় প্রস্তুতকৃত কোনো চলচ্চিত্র ছায়াছবি, সাবটাইটেলসহ বা সাবটাইটেল ব্যতীত আমদানি করা যাইবে না।
একই অনুচ্ছেদের ‘গ’তে বলা হয়েছে-বাংলাদেশে নির্মিত চলচ্চিত্র সাফটা ভুক্ত দেশসমুহে রপ্তানির বিপরীতে সমান সংখ্যক চলচ্চিত্র তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট দেশ হতে আমদানি করা যাইবে।
যদিও দেশের সিনেমা হলে হিন্দি সিনেমা মুক্তির ব্যাপারে একমত হয়েছেন চলচ্চিত্রের ১৯টি সংগঠন। ১৯ ফেব্রুয়ারি এ জন্য দুপুরে তথ্য মন্ত্রণালয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে চলচ্চিত্রের ১৯ সংগঠনের নেতাদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সম্মিলিত চলচ্চিত্রের পরিষদ নেতারা ‘নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিদেশি (উপমহাদেশীয় ভাষার) চলচ্চিত্র আমদানি ও মুক্তি প্রসঙ্গে’ শিরোনামে পত্রটি মন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন।
এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ, শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তার ও সদস্য রিয়াজ, প্রদর্শক সমিতির সভাপতি কাজী শোয়েব রশীদ, সহ-সভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন, প্রযোজক পরিবেশক সমিতির পক্ষে খোরশেদ আলম খসরু ও মোহাম্মদ হোসেন, ফিল্ম ক্লাবের সভাপতি কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া এবং সম্মিলিত চলচ্চিত্রের পরিষদের সদস্য সচিব শাহ আলম কিরণ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী সংবাদিকদের বলেন, ‘দীর্ঘ কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় কিছু শর্তসাপেক্ষে নির্দিষ্ট সংখ্যক ভারতীয় হিন্দি ছবি আমদানির ব্যাপারে চলচ্চিত্র অঙ্গণের সবাই একমত হয়েছেন এ জন্য তাদেরকে অভিনন্দন। আমিও নির্দিষ্ট পরিমাণ আমদানির পক্ষে।’
হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশে আগের তুলনায় সিনেমা বেশি হচ্ছে এবং অনেক সিনেমা বক্স অফিস হিট করছে। কিন্তু এখনো প্রতি সপ্তাহে ভালোভাবে চালানোর মতো সিনেমা সবসময় হচ্ছে না, এটি বাস্তবতা। সেই বাস্তবতার নিরিখে আপনারা সুচিন্তিতভাবে, ভেবে-চিন্তে মতামত দিয়েছেন যে, নির্দিষ্ট পরিমাণ ভারতীয় হিন্দি ছবি যদি আমদানি হয় তাহলে অনেকেই আবার হলমুখী হবে এবং তখন আমাদের বাংলা ছবিও দেখতে যাবে।’
দেশীয় একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সাফটা চুক্তির মাধ্যমে সিনেমাটি দেশে আনার চেষ্টা করছে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আবেদনকারী চলচ্চিত্র নির্মাতা অনন্য মামুন বলেন, ‘আমি তো আশাবাদী বাংলাদেশে পাঠান মুক্তি পাবে। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে এখনো ইতিবাচক কোনো ফলাফল পাচ্ছি না। আমদানি নীতিমালায় হিন্দি বা উর্দু ছবি বাংলাদেশে আনতে মানা আছে। আবার সাফটা চুক্তিতে বাইরের দেশের যেকোনো সিনেমা বাংলাদেশে মুক্তিতে বাধা নেই। আমরা পাঠান সিনেমা সাফটা চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে আনার জন্য আবেদন করেছি।’
শাহরুখ খান অভিনীত এই সিনেমা মুক্তির পর থেকেই একের পর এক রেকর্ড গড়ে যাচ্ছে। চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি ভারতে মুক্তি পেয়েছে ‘পাঠান’। সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত সিনেমাটি দিয়ে ৪ বছর পর বড় পর্দায় ফিরছেন শাহরুখ খান। এ সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন দীপিকা পাড়ুকোন, জন আব্রাহাম। ক্যামিও হিসেবে আছেন সালমান খান।
সুত্র ; ঢাকাপ্রকাশ