রাষ্ট্র সংস্কারের পর নির্বাচন দিতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে বুঝতে হবে জনগণ কী চায়। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার জনপ্রতিনিধি ছাড়া সম্ভব নয়।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় চুয়াডাঙ্গার টাউন ফুটবল মাঠে বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভার্চুয়াল বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করে জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। তারপর নির্বাচিত সরকার বাকি সংস্কার করবে।’ এ সময় দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান তারেক রহমান।
সম্মেলনে বিএনপির নেতাকর্মীদের আচরণ নিয়ে নতুন নির্দেশনা দেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘বিএনপির কাঁধে এখন অনেক দায়িত্ব। এ দেশের মানুষের অনেক প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা বিএনপিকে নিয়ে। সুতরাং দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী নেতাকর্মীদের আচরণ করতে হবে। নিজেদের তৈরি হতে হবে।’
সম্মেলনের উদ্বোধন করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এদেশে ফ্যাসিবাদের জনক শেখ মুজিবুর রহমান। তার হাত ধরেই অর্থাৎ তার নেতৃত্বেই এদেশে হত্যা, লুণ্ঠন এবং অপরাজনীতি শুরু হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত নতুন বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বদলে গণতন্ত্র হত্যা করে সব দলকে নিষিদ্ধ করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে একটি রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির সৃষ্টি করে মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশকে একটি বদ্ধ কারাগারে পরিণত করা হয়েছিল।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শেখ মুজিবের উত্তরসূরি ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত বাস্তবায়নকারী শেখ হাসিনা গত ১৭ বছর এ দেশের জনগণের ঘাড়ে অবৈধভাবে চেপে বসে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে অবরুদ্ধ করে অসংখ্য খুন, গুম, ব্যাংক লুট এবং অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করছিল। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে বাংলাদেশকে দেউলিয়া এবং চরম দারিদ্র্যের শেষ সীমায় পৌঁছে দিয়ে গেছে।’
মির্জা ফখরুল দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দাবি করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘দেশকে দেশি-বিদেশি চক্রান্তের মোকাবিলা করে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। আর এটা করতে হলে অবিলম্বে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দরকার।’
শুরুতে সম্মেলনের উদ্বোধক বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্য নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পবিত্র কোরআন ও গীতা পাঠ করা হয়। এরপর সম্মেলনের উদ্বোধকসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। বিগত দিনে জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন জেলা বিএনপি নেতা ওয়াহেদুজ্জামান বুলা। সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবুর সভাপতিত্বে এ সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির সহ-সভাপতি শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাড. নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা বিভাগীয় সহ-সভাপতি বাবু জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ অরুন, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল মজিদ। সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা।
সম্মেলনের একপর্যায়ে জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা যারা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের হাতে তারেক রহমানের পক্ষে উপহার সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।
সম্মেলনে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু এরই মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় আজকের সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে ৮০৮ কাউন্সিলর তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
দীর্ঘদিন পর বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা এবং আনন্দমুখর পরিবেশে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্মেলন-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে।