চুয়াডাঙ্গা ০৩:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাপদাহ ও লোডশেডিং চরমে,গাংনীর জনজিবন বিপর্যস্ত

মেহেরপুরের গাংনীতে একদিকে প্রচন্ড তাপদাহ অন্যদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গেল এক সপ্তাহ ধরে বয়ে যাওয়া তাপদাহ সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বৈদ্যুতিক লোডশেডিং। এতে করে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষ ও এসএসসি পরীক্ষার্থীরা বেশি ভোগান্তির শিকার।

 

আবহাওয়া অফিস বলছে, আরো কয়েকদিন এমন বৈরী আবহাওয়া থাকতে পারে। আর স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এ মুহুর্তে অতিরিক্ত পানি পান, তরল খাবার এবং ঝুঁকি না নিয়ে রোদ্রের মধ্যে সাবধানে চলাফেরা করার পরামর্শ দিয়েছেন।

 

এমনিতেই শীতের সময় শীত আর গরমের সময় প্রচন্ড গরম থাকে মেহেরপুরে। তবে এবার একটু বেশি গরম পড়ছে। গেল এক সপ্তাহে জেলায় তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠানামা করছে। ঠাটা পরা রৌদ্র সেই সাথে তাপদাহ যেন আগুনের লেলিহান শিখায় রূপ ধারণ করেছে। সকাল ১০ টার পরপরই তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। একটানা বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বয়ে চলা এই আবহাওয়ায় জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ রাস্তাঘাটে বের হতে চাইছেন না। সব থেকে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। কাজ না করলে পেটে ভাত জুটবে না তাই এই তাপদাহকে উপেক্ষা করেও মাঠে বের হতে হচ্ছে।

 

গাংনী শহরের রিকশাচালক রুলিম জানান, তার সংসারে রয়েছে স্ত্রী ও চার ছেলে মেয়ে। সারাদিন রিকশা চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই তার সংসার চলে। গত কয়েক দিন যাবত প্রচন্ড রোদে রিকশা চালাতে না পারাই সংসারে এসেছে অভাব অনটন। বাধ্য হয়ে এই রোদ্রের মধ্যেও তাকে রিকশা নিয়ে বের হতে হয়েছে। কিন্তু প্রচন্ড রোদের কারণে যাত্রীরা বের না হওয়ায় গাছের নিচে অলস সময় পার করছেন। অপেক্ষা করছেন বিকেলের যাত্রিদের জন্য। একই কথা জানালেন গাড়াডোব গ্রামের রিকশাচালক ইব্রাহিম।

 

গাংনী শহরের উত্তরপাড়ায় একটি বিল্ডিংয়ের কাজ করছিলেন রাজমিস্ত্রি ও কয়েকজন রড মিস্ত্রি। রডের কাজ করা শ্রমিক ইসতিয়াক হোসেন জানান, সামান্য রোদে লোহার রোড অতিরিক্ত গরম হয়ে ওঠে। এখন যে তাপমাত্রা চলছে তাতে রডে হাত দেওয়ার উপায় নেই। তারপরেও পরিবার-পরিজনের কথা ভেবে কাজে আসতে হচ্ছে। গত দুই দিনে কাজে এসে তার দু’হাতে ফোসকা পড়ে গেছে। প্রচন্ড রোদে মাথায় গামছা বেধে কাজ করতে হচ্ছে তাদের। রায়পুর মাঠে কাজ করা খেতমজুর লিয়াকত আলী জানান, প্রখর রোদে তারা ধান কাটতে পারছেন না। রোদ ও গরমে শরীরে বিভিন্ন ক্ষত দেখা দিয়েছে। একটু জিড়িয়ে নেয়ার জন্য গাছের ছায়ায় বসলে দেখতে হচ্ছে গৃহস্থের চোখ রাঙানি।

 

যুগিরগোফা গ্রামের ধানচাষি আশাদুল মেম্বার ও তুষার আহাম্মেদ জানান, প্রচন্ড গরমের কারনে দিনমজুরেরা কেউ কাজ করতে চাচ্ছেন না। যারা তাপদাহ উপেক্ষা করে কাজে আসছেন তাদের জন্য গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ মজুরি।

এদিকে দিনে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে জনজিবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। দিরে কাজ শেষে রাতে বিশ্রাম নিতে পারছেন কেও। বিশেষ করে পরীক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। প্রচন্ড গরমে পড়ালেখা করতে না পারায় ফলাফল বিপর্যয়ও হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা। গাংনী পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম নাসিরুদ্দীন জানান, জাতীয় গ্রীড থেকে বিদ্যুত সরবরাহ কম থাকায় গ্রাহক পর্যায়ে লোড শেডিং বেড়েছে। তিনি আরো জানান, গরমে বিদ্যুতের তার কেটে পড়া পড়ছে তাই কৌশলগত কারনেবিদ্যুত কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখতে হয়। খুব তাড়াতাড়িই এর সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

মেহেরপুর আবহাওয়া অফিস সুত্র জানায়, গত এক সপ্তাহ যাবত মেহেরপুর জেলায় তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি থেকে ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠানামা করছে। আরও কয়েকদিন এই বৈরী আবহাওয়া থাকবে।

 

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আব্দুল্লাহ আল মারুফ জানান, কয়েকদিন যাবত অতিমাত্রায় গরম ও তাপদাহে হাসপাতালে রোগীদের সংখ্যা বেড়েছে। দেখা দিয়েছে জ¦র ও শ^াসকষ্ট। গরমে বের হলে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি। তাই বেশি করে পানি পান ও রোদে প্রয়োজন ছাড়া না বেরুনোর জন্য পরামর্শ দেন।

Powered by WooCommerce

তাপদাহ ও লোডশেডিং চরমে,গাংনীর জনজিবন বিপর্যস্ত

আপডেটঃ ০৫:২১:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ মে ২০২৩

মেহেরপুরের গাংনীতে একদিকে প্রচন্ড তাপদাহ অন্যদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গেল এক সপ্তাহ ধরে বয়ে যাওয়া তাপদাহ সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বৈদ্যুতিক লোডশেডিং। এতে করে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষ ও এসএসসি পরীক্ষার্থীরা বেশি ভোগান্তির শিকার।

 

আবহাওয়া অফিস বলছে, আরো কয়েকদিন এমন বৈরী আবহাওয়া থাকতে পারে। আর স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এ মুহুর্তে অতিরিক্ত পানি পান, তরল খাবার এবং ঝুঁকি না নিয়ে রোদ্রের মধ্যে সাবধানে চলাফেরা করার পরামর্শ দিয়েছেন।

 

এমনিতেই শীতের সময় শীত আর গরমের সময় প্রচন্ড গরম থাকে মেহেরপুরে। তবে এবার একটু বেশি গরম পড়ছে। গেল এক সপ্তাহে জেলায় তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠানামা করছে। ঠাটা পরা রৌদ্র সেই সাথে তাপদাহ যেন আগুনের লেলিহান শিখায় রূপ ধারণ করেছে। সকাল ১০ টার পরপরই তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। একটানা বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বয়ে চলা এই আবহাওয়ায় জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ রাস্তাঘাটে বের হতে চাইছেন না। সব থেকে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। কাজ না করলে পেটে ভাত জুটবে না তাই এই তাপদাহকে উপেক্ষা করেও মাঠে বের হতে হচ্ছে।

 

গাংনী শহরের রিকশাচালক রুলিম জানান, তার সংসারে রয়েছে স্ত্রী ও চার ছেলে মেয়ে। সারাদিন রিকশা চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই তার সংসার চলে। গত কয়েক দিন যাবত প্রচন্ড রোদে রিকশা চালাতে না পারাই সংসারে এসেছে অভাব অনটন। বাধ্য হয়ে এই রোদ্রের মধ্যেও তাকে রিকশা নিয়ে বের হতে হয়েছে। কিন্তু প্রচন্ড রোদের কারণে যাত্রীরা বের না হওয়ায় গাছের নিচে অলস সময় পার করছেন। অপেক্ষা করছেন বিকেলের যাত্রিদের জন্য। একই কথা জানালেন গাড়াডোব গ্রামের রিকশাচালক ইব্রাহিম।

 

গাংনী শহরের উত্তরপাড়ায় একটি বিল্ডিংয়ের কাজ করছিলেন রাজমিস্ত্রি ও কয়েকজন রড মিস্ত্রি। রডের কাজ করা শ্রমিক ইসতিয়াক হোসেন জানান, সামান্য রোদে লোহার রোড অতিরিক্ত গরম হয়ে ওঠে। এখন যে তাপমাত্রা চলছে তাতে রডে হাত দেওয়ার উপায় নেই। তারপরেও পরিবার-পরিজনের কথা ভেবে কাজে আসতে হচ্ছে। গত দুই দিনে কাজে এসে তার দু’হাতে ফোসকা পড়ে গেছে। প্রচন্ড রোদে মাথায় গামছা বেধে কাজ করতে হচ্ছে তাদের। রায়পুর মাঠে কাজ করা খেতমজুর লিয়াকত আলী জানান, প্রখর রোদে তারা ধান কাটতে পারছেন না। রোদ ও গরমে শরীরে বিভিন্ন ক্ষত দেখা দিয়েছে। একটু জিড়িয়ে নেয়ার জন্য গাছের ছায়ায় বসলে দেখতে হচ্ছে গৃহস্থের চোখ রাঙানি।

 

যুগিরগোফা গ্রামের ধানচাষি আশাদুল মেম্বার ও তুষার আহাম্মেদ জানান, প্রচন্ড গরমের কারনে দিনমজুরেরা কেউ কাজ করতে চাচ্ছেন না। যারা তাপদাহ উপেক্ষা করে কাজে আসছেন তাদের জন্য গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ মজুরি।

এদিকে দিনে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে জনজিবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। দিরে কাজ শেষে রাতে বিশ্রাম নিতে পারছেন কেও। বিশেষ করে পরীক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। প্রচন্ড গরমে পড়ালেখা করতে না পারায় ফলাফল বিপর্যয়ও হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা। গাংনী পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম নাসিরুদ্দীন জানান, জাতীয় গ্রীড থেকে বিদ্যুত সরবরাহ কম থাকায় গ্রাহক পর্যায়ে লোড শেডিং বেড়েছে। তিনি আরো জানান, গরমে বিদ্যুতের তার কেটে পড়া পড়ছে তাই কৌশলগত কারনেবিদ্যুত কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখতে হয়। খুব তাড়াতাড়িই এর সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

মেহেরপুর আবহাওয়া অফিস সুত্র জানায়, গত এক সপ্তাহ যাবত মেহেরপুর জেলায় তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি থেকে ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠানামা করছে। আরও কয়েকদিন এই বৈরী আবহাওয়া থাকবে।

 

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আব্দুল্লাহ আল মারুফ জানান, কয়েকদিন যাবত অতিমাত্রায় গরম ও তাপদাহে হাসপাতালে রোগীদের সংখ্যা বেড়েছে। দেখা দিয়েছে জ¦র ও শ^াসকষ্ট। গরমে বের হলে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি। তাই বেশি করে পানি পান ও রোদে প্রয়োজন ছাড়া না বেরুনোর জন্য পরামর্শ দেন।