অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোববার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সম্মেলনের নৈশভোজে অংশ নিয়ে বলেছেন,নেপাল বারবার বলছে, আমাদের নিয়ে যাও, আমরা এক পায়ে খাড়া নেয়ার জন্য। কিন্তু মাঝখানে ওইটুকু পথ অতিক্রমের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। নেপালের যে অবস্থা, ভুটানের যে অবস্থা, ভারতের সেভেন সিস্টার্সেরও একই অবস্থা।
ড. ইউনূস আরো বলেন, দুই পাশে দুই মহাশক্তি আমাদের। ভারত আর চীন। তারা দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে। আমরা যেহেতু মাঝখানে আছি, আমাদের ফেলে যেতে পারবে না। তাদের বাতাসে আমরাও উড়তে থাকব। সেই থেকে আমার বদ্ধমূল ধারণা, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অতি চমৎকার তার অবস্থানের কারণে।
তিনি আরো বলেন, ‘তখন দুই মহাশক্তির কথা বলেছিলাম, এখন আর দুই মহাশক্তির কথা বলি না। এখন চার মহাশক্তি। আমাদের অপূর্ব সুযোগ। আমাদের সামনে বিস্তীর্ণ মহাসাগর। আমাদের উপকূলভূমি সাগরের সঙ্গেই লাগোয়া উপকূল। এটি একটি মস্তবড় সুযোগ। পৃথিবীর দরজা আমাদের সামনে খোলা। আমরা এতদিন এটি ব্যবহার করতে জানিনি। এখন যেই মুহূর্তে এর ব্যবহার শুরু করব, আমাদের অর্থনীতিকে লোহার দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখলেও, বেঁধে রাখতে পারবে না। আমাদের উত্তরে সেই বিখ্যাত হিমালয় পর্বতমালার উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, যেখানে জমে আছে যাবতীয় শক্তি—হাইড্রো পাওয়ার। আমাদের কত শক্তি দরকার, সব ওখানে জমা আছে, হারিয়ে যাচ্ছে না। শুধু নেয়ার অপেক্ষায়, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির অপেক্ষায়, যাতে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে যে দূরত্বটুকু আছে, তা অতিক্রম করা যায়।
ড. ইউনূস বলেন, ‘নেপাল বারবার বলছে, ‘আমাদের নিয়ে যাও, আমরা প্রস্তুত’। কিন্তু মাঝখানে ওইটুকু পথ অতিক্রম করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। আশা করি, তাদেরই অর্থনৈতিক কারণে তারা আমাদের সেই সুযোগ দেবে। এটা সবার মঙ্গলের জন্য। আমরা মহাসৌভাগ্যবান এক জাতি আমাদের অবস্থানের কারণে। তাহলে এই জাতির দুঃখ কেন থাকবে? এটা কি আমাদের কপালের দোষ, চরিত্রের দোষ, নাকি চিন্তার দোষ? যদি হয়ে থাকে, তাহলে সেগুলো থেকে মুক্ত হতে হবে। আমরা তড়িৎ গতি এগিয়ে যেতে চাই। এটি মহা শক্তিধর অর্থনীতি তৈরি হবে।‘আজ কুমিরা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত যে উপকূলভূমি রয়েছে, সেখানে যদি কাতারে কাতারে সব নৌবন্দর স্থাপন হয়, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত যদি বিশ্বের সব জাহাজকে আশ্রয় দেওয়া যায়, তাহলে আমাদের আটকাবে কে?
“আমাদের উত্তরে নেপাল। তাদের সৌভাগ্য, তারা হিমালয় পর্বতের পাদদেশে আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো তারা সমুদ্রের দেখা পায় না। তাদের সমুদ্র দেখতে হলে আমাদের মাধ্যমে দেখতে হবে।” তিনি বলেন ‘‘ভুটানের অবস্থাও একই। তাদেরও সমুদ্র দর্শনের সুযোগ নেই। তাদের সমুদ্র দেখতে হলে আমাদের মাধ্যমে আসতে হবে। তেমনিভাবে ভারতের পূর্বাঞ্চল—সেভেন সিস্টার্স—তাদের অবস্থাও একই। তাদের সমুদ্র দর্শন হয় না। ‘‘আমরা একসঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে পারি। আমাদের সমুদ্রবন্দর দিয়ে তাদের মালামাল আনা-নেয়া হবে, আমাদের মালামালও চলবে। এতে আমাদের অর্থনীতি এবং তাদের অর্থনীতি একসঙ্গে সমৃদ্ধ হবে।”
বার্তাবাজার/এস এইচ