ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ সোমবার। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সূচনাপর্বের এই দিনে তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার (বর্তমানে জেলা) বৈদ্যনাথতলার (বর্তমান মুজিবনগর) নিভৃত এক আমবাগানে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নিয়েছিল স্বাধীন বাংলার অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার। এ আমবাগানকে পরে ‘মুজিবনগর’ নামকরণ করে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী ঘোষণা করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাঁরা।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই দিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে এই বৈদ্যনাথতলাকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়।
দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ১৭ এপ্রিল এক অবিস্মরণীয় দিন। সেদিন ‘মুজিবনগর সরকার’খ্যাত বিপ্লবী সরকারের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে মূলত মুক্তিযুদ্ধ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ সরকার অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনসহ রাজনৈতিক-কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং ভারতে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১ কোটি শরণার্থীর পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করে। মুক্তিযুদ্ধের সফল পরিণতিও ঘটে এ সরকারের দক্ষ পরিচালনায়। তাঁদের নেতৃত্বেই একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও দু’লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা লাভ করে। বাঙালির নিজস্ব আবাসভূমি হিসেবে স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নেয়।
মুজিবনগরে সেদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ নেয়। তবে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে করা হয় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। সেদিন বিপ্লবী সরকারের মন্ত্রিপরিষদের আনুষ্ঠানিক শপথ ছাড়াও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ ও মুক্তিবাহিনীর মার্চপাস্ট অনুষ্ঠিত হয়। এর এক সপ্তাহ আগে ১০ এপ্রিল জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বাংলাদেশের ঘোষণাপত্র অনুমোদন এবং বিপ্লবী সরকার গঠন করেন।
এর আগে পাকিস্তানি শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে অসহযোগ ও স্বাধিকার আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তান বাহিনী বাঙালি নিধনযজ্ঞ শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবন থেকে বঙ্গবন্ধুকে বন্দি করে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায় হানাদার বাহিনী। এরপর ১০ এপ্রিল বিপ্লবী সরকার গঠন ও ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে সেই সরকারের আনুষ্ঠানিক শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
দিবস উপলক্ষে মুজিবনগর উপজেলায় সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। যৌথভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মেহেরপুর জেলা প্রশাসন। মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সে আজ ভোরে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানমালার সূচনা হবে। সকাল ৯টায় মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, ৯টা ১০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি, বিএনসিসি, স্কাউটস, গার্লস গাইড ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান এবং কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করা হবে। সকাল ১০টায় সেখানে আনসার ও ভিডিপির পরিবেশনায় ‘জল মাটি ও মানুষ’ শিরোনামে গীতিনাট্য উপস্থাপনা এবং সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে মুজিবনগর শেখ হাসিনা মঞ্চে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে আছে, ভোর ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সারাদেশের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন; সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং মুজিবনগরে ভোর ৬টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ১০টায় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং পরে গার্ড অব অনার প্রদান ও মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ।