চুয়াডাঙ্গা ০৭:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ
চুয়াডাঙ্গায় বিপুল পরিমাণ ভেজাল শিশুখাদ্য উদ্ধার : গোডাউন সিলগালা ও ৪ লাখ টাকা জরিমানা আলমডাঙ্গায় কম্বল চুরি,মাদক ব্যবসার অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান আটক দর্শনায় দু মহিলাকে কুপিয়ে জখম,যুবক আটক রুট পরিবর্তন হচ্ছে না বেনাপোল-সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের চুয়াডাঙ্গায় রুট পরিবর্তনের দাবিতে রেলপথ অবরোধ চুয়াডাঙ্গার সড়কে ভ্যান থেকে ছিটকে পড়ে নারী নিহত ঝিনাইদহে প্রেমিকের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে একসঙ্গে দুই তরুণীর অনশন দামুড়হুদায় কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের পথসভা ও লিফলেট বিতরণ দর্শনায় বি এন পি নেতাকে কুপালো যুবলীগ কর্মী জীবননগর থানা থেকে পালিয়ে যাওয়া আসামী গ্রেফতার

বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সমাহার রমজান

ক্ষমার মহান বার্তা নিয়ে স্বমহিমায় হাজির পবিত্র রমজান। এ মাসে প্রতিটি ইবাদতের প্রতিদান যেমন বহুগুণে বেড়ে যায়, তেমনি সব পাপ ছেড়ে দিয়ে ভালো মানুষ হিসেবে নিজের জীবনকে নতুন করে সাজানোর সুযোগও এনে দেয় রমজান। বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সমাহার- এই মাসের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেয়।

 

১. সিয়াম ও কিয়ামের মাস : মুসলিম উম্মাহর কাছে রমজান মাসের আগমন ঘটে প্রধানত ফরজ রোজা ও তারাবিহর বার্তা নিয়ে। এটি রমজান মাসের বিশেষ আমল। হাজার চাইলেও অন্য মাসে এসব আমল অসম্ভব। তাই প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য, পূর্ণ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে এ দুই বিষয়ে যতœবান হওয়া। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি; যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো’ (সূরা বাকারা-১৮৩)।

 

২. কুরআন নাজিলের মাস : রমজানুল মোবারকের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো তা কুরআন নাজিলের মাস। এই পবিত্র মাসেই আল্লাহ তায়ালা পূর্ণ কুরআন মাজিদ লাওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে অবতীর্ণ করেন। এরপর রাসূলে কারিম সা:-এর কাছে কুরআনের সর্বপ্রথম অহিও এ মাসেই নাজিল হয়। মহান রবের ইরশাদ- ‘রমজান মাস, যাতে কুরআন নাজিল হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সুপথ প্রাপ্তির সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর হক-বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী’ (সূরা বাকারা-১৮৫)।

 

৩. মুসলমানদের জন্য সর্বোত্তম মাস : হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালার কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনগণ এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গণিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ’ (মুসনাদে আহমাদ-৮৩৬৮)।

 

৪. জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও দোয়া কবুলের মাস : আল্লাহ তায়ালা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দান করেন। সুতরাং আমাদের কর্তব্য, বেশি বেশি নেক আমল ও তাওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে নিজেদের এই শাহি ফরমানের অন্তর্ভুক্ত করা। হজরত জাবির রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসে প্রতি ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। প্রতি রাতেই তা হয়ে থাকে’ (ইবনে মাজাহ-১৬৪৩)।

 

৫. বহুগুণে পুণ্য বৃদ্ধির মাস : রমজান মাসের আরেকটি বৈশিষ্ট্য এই যে, এ মাস মুমিনের নেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধির মাস এবং আখিরাতের সওদা করার শ্রেষ্ঠ সময়। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা: এক আনসারি মহিলাকে বললেন, ‘তুমি কেন আমাদের সাথে হজ করতে যাওনি? সে বলল, আমাদের পানি বহনকারী দু’টি মাত্র উট রয়েছে। একটিতে আমার স্বামী ও ছেলে হজ করতে গেছেন, অন্যটি পানি বহনের জন্য আমাদের কাছে রেখে গেছেন। তিনি (নবী সা:) বলেন, রমজান মাস এলে তুমি ওমরাহ করবে। কেননা, এ মাসের ওমরাহ একটি হজের সমতুল্য। সহিহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘রমজান মাসের ওমরাহ একটি হজের সমতুল্য’ (সহিহ মুসলিম-১২৫৬)।

 

৬. পাপ মোচন ও ক্ষমা লাভের মাস : হজরত আবু হুরায়রা রা: বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলতেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহসমূহকে মুছে দেয় যদি সে কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে’ (মুসলিম-২৩৩)।ক্ষমা লাভের এমন সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যে ব্যক্তি নিজের পাপসমূহ ক্ষমা করাতে পারে না সে সত্যিই ক্ষতিগ্রস্ত। হাদিস শরিফে তার জন্য বদদোয়া করা হয়েছে।

 

৭. লাইলাতুল কদরের মাস : আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে মুসলিম উম্মাহর জন্য আরেকটি বিশেষ দান হলো এক হাজার রাত অপেক্ষা উত্তম লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তায়ালা এ রাত সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন- ‘লাইলাতুল কদর এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিবরাইল আ:) তাদের পালনকর্তার আদেশক্রমে প্রত্যেক কল্যাণময় বস্তু নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। যে রাত পুরোটাই শান্তি, যা ফজর হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে’ (সূরা কদর : ৩-৫)।

 

রমজান মাস রহমত, বরকত, মাগফিরাত, জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের মাস। সুতরাং এ মাসের শান-মান ঠিক রেখে আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করা প্রত্যেক মুমিনের একান্ত দায়িত্ব।

চুয়াডাঙ্গায় বিপুল পরিমাণ ভেজাল শিশুখাদ্য উদ্ধার : গোডাউন সিলগালা ও ৪ লাখ টাকা জরিমানা

avashnews
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সমাহার রমজান

প্রকাশ : ০৩:৫৬:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩

ক্ষমার মহান বার্তা নিয়ে স্বমহিমায় হাজির পবিত্র রমজান। এ মাসে প্রতিটি ইবাদতের প্রতিদান যেমন বহুগুণে বেড়ে যায়, তেমনি সব পাপ ছেড়ে দিয়ে ভালো মানুষ হিসেবে নিজের জীবনকে নতুন করে সাজানোর সুযোগও এনে দেয় রমজান। বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সমাহার- এই মাসের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেয়।

 

১. সিয়াম ও কিয়ামের মাস : মুসলিম উম্মাহর কাছে রমজান মাসের আগমন ঘটে প্রধানত ফরজ রোজা ও তারাবিহর বার্তা নিয়ে। এটি রমজান মাসের বিশেষ আমল। হাজার চাইলেও অন্য মাসে এসব আমল অসম্ভব। তাই প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য, পূর্ণ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে এ দুই বিষয়ে যতœবান হওয়া। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি; যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো’ (সূরা বাকারা-১৮৩)।

 

২. কুরআন নাজিলের মাস : রমজানুল মোবারকের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো তা কুরআন নাজিলের মাস। এই পবিত্র মাসেই আল্লাহ তায়ালা পূর্ণ কুরআন মাজিদ লাওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে অবতীর্ণ করেন। এরপর রাসূলে কারিম সা:-এর কাছে কুরআনের সর্বপ্রথম অহিও এ মাসেই নাজিল হয়। মহান রবের ইরশাদ- ‘রমজান মাস, যাতে কুরআন নাজিল হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সুপথ প্রাপ্তির সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর হক-বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী’ (সূরা বাকারা-১৮৫)।

 

৩. মুসলমানদের জন্য সর্বোত্তম মাস : হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালার কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনগণ এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গণিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ’ (মুসনাদে আহমাদ-৮৩৬৮)।

 

৪. জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও দোয়া কবুলের মাস : আল্লাহ তায়ালা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দান করেন। সুতরাং আমাদের কর্তব্য, বেশি বেশি নেক আমল ও তাওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে নিজেদের এই শাহি ফরমানের অন্তর্ভুক্ত করা। হজরত জাবির রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসে প্রতি ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। প্রতি রাতেই তা হয়ে থাকে’ (ইবনে মাজাহ-১৬৪৩)।

 

৫. বহুগুণে পুণ্য বৃদ্ধির মাস : রমজান মাসের আরেকটি বৈশিষ্ট্য এই যে, এ মাস মুমিনের নেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধির মাস এবং আখিরাতের সওদা করার শ্রেষ্ঠ সময়। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা: এক আনসারি মহিলাকে বললেন, ‘তুমি কেন আমাদের সাথে হজ করতে যাওনি? সে বলল, আমাদের পানি বহনকারী দু’টি মাত্র উট রয়েছে। একটিতে আমার স্বামী ও ছেলে হজ করতে গেছেন, অন্যটি পানি বহনের জন্য আমাদের কাছে রেখে গেছেন। তিনি (নবী সা:) বলেন, রমজান মাস এলে তুমি ওমরাহ করবে। কেননা, এ মাসের ওমরাহ একটি হজের সমতুল্য। সহিহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘রমজান মাসের ওমরাহ একটি হজের সমতুল্য’ (সহিহ মুসলিম-১২৫৬)।

 

৬. পাপ মোচন ও ক্ষমা লাভের মাস : হজরত আবু হুরায়রা রা: বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলতেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহসমূহকে মুছে দেয় যদি সে কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে’ (মুসলিম-২৩৩)।ক্ষমা লাভের এমন সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যে ব্যক্তি নিজের পাপসমূহ ক্ষমা করাতে পারে না সে সত্যিই ক্ষতিগ্রস্ত। হাদিস শরিফে তার জন্য বদদোয়া করা হয়েছে।

 

৭. লাইলাতুল কদরের মাস : আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে মুসলিম উম্মাহর জন্য আরেকটি বিশেষ দান হলো এক হাজার রাত অপেক্ষা উত্তম লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তায়ালা এ রাত সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন- ‘লাইলাতুল কদর এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিবরাইল আ:) তাদের পালনকর্তার আদেশক্রমে প্রত্যেক কল্যাণময় বস্তু নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। যে রাত পুরোটাই শান্তি, যা ফজর হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে’ (সূরা কদর : ৩-৫)।

 

রমজান মাস রহমত, বরকত, মাগফিরাত, জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের মাস। সুতরাং এ মাসের শান-মান ঠিক রেখে আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করা প্রত্যেক মুমিনের একান্ত দায়িত্ব।