ক্ষমার মহান বার্তা নিয়ে স্বমহিমায় হাজির পবিত্র রমজান। এ মাসে প্রতিটি ইবাদতের প্রতিদান যেমন বহুগুণে বেড়ে যায়, তেমনি সব পাপ ছেড়ে দিয়ে ভালো মানুষ হিসেবে নিজের জীবনকে নতুন করে সাজানোর সুযোগও এনে দেয় রমজান। বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সমাহার- এই মাসের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেয়।
১. সিয়াম ও কিয়ামের মাস : মুসলিম উম্মাহর কাছে রমজান মাসের আগমন ঘটে প্রধানত ফরজ রোজা ও তারাবিহর বার্তা নিয়ে। এটি রমজান মাসের বিশেষ আমল। হাজার চাইলেও অন্য মাসে এসব আমল অসম্ভব। তাই প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য, পূর্ণ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে এ দুই বিষয়ে যতœবান হওয়া। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি; যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো’ (সূরা বাকারা-১৮৩)।
২. কুরআন নাজিলের মাস : রমজানুল মোবারকের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো তা কুরআন নাজিলের মাস। এই পবিত্র মাসেই আল্লাহ তায়ালা পূর্ণ কুরআন মাজিদ লাওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে অবতীর্ণ করেন। এরপর রাসূলে কারিম সা:-এর কাছে কুরআনের সর্বপ্রথম অহিও এ মাসেই নাজিল হয়। মহান রবের ইরশাদ- ‘রমজান মাস, যাতে কুরআন নাজিল হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সুপথ প্রাপ্তির সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর হক-বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী’ (সূরা বাকারা-১৮৫)।
৩. মুসলমানদের জন্য সর্বোত্তম মাস : হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালার কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনগণ এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গণিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ’ (মুসনাদে আহমাদ-৮৩৬৮)।
৪. জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও দোয়া কবুলের মাস : আল্লাহ তায়ালা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দান করেন। সুতরাং আমাদের কর্তব্য, বেশি বেশি নেক আমল ও তাওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে নিজেদের এই শাহি ফরমানের অন্তর্ভুক্ত করা। হজরত জাবির রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসে প্রতি ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। প্রতি রাতেই তা হয়ে থাকে’ (ইবনে মাজাহ-১৬৪৩)।
৫. বহুগুণে পুণ্য বৃদ্ধির মাস : রমজান মাসের আরেকটি বৈশিষ্ট্য এই যে, এ মাস মুমিনের নেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধির মাস এবং আখিরাতের সওদা করার শ্রেষ্ঠ সময়। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা: এক আনসারি মহিলাকে বললেন, ‘তুমি কেন আমাদের সাথে হজ করতে যাওনি? সে বলল, আমাদের পানি বহনকারী দু’টি মাত্র উট রয়েছে। একটিতে আমার স্বামী ও ছেলে হজ করতে গেছেন, অন্যটি পানি বহনের জন্য আমাদের কাছে রেখে গেছেন। তিনি (নবী সা:) বলেন, রমজান মাস এলে তুমি ওমরাহ করবে। কেননা, এ মাসের ওমরাহ একটি হজের সমতুল্য। সহিহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘রমজান মাসের ওমরাহ একটি হজের সমতুল্য’ (সহিহ মুসলিম-১২৫৬)।
৬. পাপ মোচন ও ক্ষমা লাভের মাস : হজরত আবু হুরায়রা রা: বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলতেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহসমূহকে মুছে দেয় যদি সে কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে’ (মুসলিম-২৩৩)।ক্ষমা লাভের এমন সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যে ব্যক্তি নিজের পাপসমূহ ক্ষমা করাতে পারে না সে সত্যিই ক্ষতিগ্রস্ত। হাদিস শরিফে তার জন্য বদদোয়া করা হয়েছে।
৭. লাইলাতুল কদরের মাস : আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে মুসলিম উম্মাহর জন্য আরেকটি বিশেষ দান হলো এক হাজার রাত অপেক্ষা উত্তম লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তায়ালা এ রাত সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন- ‘লাইলাতুল কদর এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিবরাইল আ:) তাদের পালনকর্তার আদেশক্রমে প্রত্যেক কল্যাণময় বস্তু নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। যে রাত পুরোটাই শান্তি, যা ফজর হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে’ (সূরা কদর : ৩-৫)।
রমজান মাস রহমত, বরকত, মাগফিরাত, জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের মাস। সুতরাং এ মাসের শান-মান ঠিক রেখে আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করা প্রত্যেক মুমিনের একান্ত দায়িত্ব।