বাংলাদেশের অন্যতম ফ্যাশন আইকন, মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ এর ফার্স্ট রানার আপ আলিশা ইসলাম। যিনি সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ফেমাস প্যারিস ফ্যাশন উইকে বাংলাদেশী মডেল হিসেবে র্যাম্পে হেঁটেছেন। অংশগ্রহণ ছিলেন ইতালির মিলান ফ্যাশন উইকেও।
প্যারিসের বিশ্ববিখ্যাত মডেল ও কোরিওগ্রাফারদের সাথে কাজ করার সেই অভিজ্ঞতার কথা জানান একান্ত সাক্ষাৎকারে।
সুন্দরী প্রতিযোগিতা থেকে পথ চলা শুরু। এরপর হেঁটেছেন র্যাম্পে, চলচ্চিত্র সহ মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রির নানান অঙ্গনে।
তিনি বলেন, আমার শুরুটাই হয়েছে মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ এর ফার্স্ট রানার আপ থেকে। তারপর থেকে মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে আমার এন্ট্রি হয়।
আমার প্রথম সিনেমা রাজু আলীম এর পরিচালনায় ইমপ্রেস টেলিফিল্মস এর ভালোবাসার প্রজাপতি। এখান থেকে আমার অ্যাক্টিং ক্যরিয়ার শুরু করি। আমাদের মিডিয়ার অনেকের সাথে পরিচয় হয়। এরপর থেকে মিডিয়ায় অনেক কাজ করা হয়। ফ্যাশন, রানওয়েতে, এঙ্করিং, উপস্থাপনা। এসব করতে করতে একটা ইচ্ছে হয়েছিলো যে বাংলাদেশ থেকে যদি আমিও আর্টিস্ট হিসেবে বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারি। যেভাবে বলা হয়, প্যারিসকে পৃথিবীর ফ্যাশনের রাজধানী বলা যায়। সেখানে আমি যদি কাজ করতে পারি তবে নিজেকে অনেক লাকি মনে করবো। এই ইন্ডাস্ট্রিতে এসে একটা কথা মনে হতো, আমিও যদি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এভাবে কাজ করতে পারতাম! এভাবে প্ল্যানিং করতে গিয়ে দেখলাম, প্যারিস ফ্যাশন শো এ বাংলাদেশী একজন ফ্যাশন ডিজাইনার আছে, ওখানে প্যারিসের ডিজাইনার আর বাংলাদেশের ডিজাইনার মিলে তারা কাজ করে। তাদের ব্র্যান্ডের জন্য একটা কাজ হলো আমার ঠিক ফ্যাশন উইকে যাবার আগে। ব্র্যান্ডটার নাম হচ্ছে ভ্যান্ডাম। ডিজাইনার তাসনিম জুবায়ের। তারই মাধ্যমে একটা ম্যাগাজিনের ফটোশ্যুট করা হয় আমার। যেটা লঞ্চ করা হয় প্যারিসেই। এভাবেই আমার সবার সাথে চেনা জানা হলো, প্যারিসে যাওয়া হলো। মিলান ফ্যাশন উইক এটেন্ড করা হলো। মিলানে হাঁটলাম। তারপর প্যারিস ফ্যাশন উইকে হাঁটলাম। হোয়াইট হাউজ নামের একটি ফ্যাশন ব্র্যান্ডের। এরপর ভ্যান্ডম নামে যেই ব্র্যান্ডটি ছিলো সেটি পরর্তীতে তাদের ব্র্যান্ড ফেইস বানিয়ে দিলো আমাকে।
বাংলাদেশের র্যাম্পের এক ধরণের টপ অফ দ্য ওয়ান হয়ে মিলানে যাবার অনুভূতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওখানে কাজ করার অভিজ্ঞতাটা খুবই সুন্দর। অসাধারণ। ওখানকার মডেলেদের হাইট, ওদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, ওদের স্টাইল, ওদের সবকিছুই অনেক অনেক ভালো। খুবই অর্গানাইজড। খুবই অসাধারণ লোকেশন, চোখে দেখেই মুগ্ধ হয়ে যাবার মতোন। ওদের ফ্যাশনও অনেক সুন্দর। ওদের বিহেইবিয়ারও অনেক ভালো। আমাদের দেশেরটা যে খারাপ এটা বলবো না। মানুষগুলা যাবার সাথে সাথেই কেমন আমাকে আপন করে নিলো। আমাকে একটু অন্য লাগছিলো ওদের মাঝে! ওদের গায়ের রং বলি, ওদের চেহারা বলি, আমাদেরটা তো ওদের মতো না। খুবই আলাদা। কিন্তু তারপরেও যখনই যাচ্ছিলাম তখনই তারা আমাকে খুব ভালোভাবে এক্সেপ্ট করে নিচ্ছিলো।
ইউরোপের দেশগুলোয় ফ্যাশনটা লিটারেচারের পর্যায়ে পরে। এদের সাথে কীভাবে কাজ করলেন, ওখানকার মডেলদের সাথে কীভাবে মিশে গেলেন, সে প্রসঙ্গে আলিশা বলেন, ওখানে কাজ করার পরিকল্পনাটা আসলে অনেক আগে থেকে, আজকের না। এখানে একজন বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার আছেন আসিফ আজিম। যিনি ইন্টান্যাশনালি বিগবসে গিয়েছেন, ল্যাকমে ফ্যাশন উইকে কাজ করেছেন, ক্যাটস আইয়ের ব্র্যান্ড ম্যানেজার ছিলেন। তিনি আমাকে অনেক ইনফ্লুয়েন্স করতেন। আলিশা তোমার অনেক কিছু করা সম্ভব। তোমার ইন্টান্যাশনালি কাজ করা উচিত। তখন থেকেই আমি ক্যালকুলেট করা শুরু করলাম, প্যারিস ফ্যাশন উইক কয়তারিখে শুরু হয়। মিলান ফ্যাশন উইক কয় তারিখে শুরু হয়। কখন ভিসা জমা দিলে ভিসা পাবো, এই ধরণের প্ল্যানিং আগে থেকেই ছিলো। ভিসা জমা দিলাম, ভিসা আসলো। শেনজেন ভিসা পেলাম। ভাবলাম, যাক তাহলে মিলান আর প্যারিস দু জায়গাতেই যাওয়া যাবে। নইলে একবার প্যারিসের ভিসা, একবার ইটালির ভিসা এভাবে কেটে যেতো। আমি প্যারিসে মানুষজন চিনতাম। প্যারিস ফ্যাশন উইকে আমার পার্টিসিপেট করার কথা ছিলো। কিন্তু মিলানেরটা আমার করার কথা ছিলো না। মিলানে আমার কেউ পরিচিত নেই। মিলানে আমার ট্যাক্সি ড্রাইভারটা হোটেলে আসার পথে আমাকে বলে আপনি তো খুব লাকি। আপনি খুবই সুন্দর সময়ে এসেছেন। মিলান ফ্যাশন উইকে। আপনি এখন দেখতে পারবেন। আমি মনে মনে ভাবি আমি তো ফ্যাশন উইক দেখেই এসেছি। আসার পর থেকেই আমার মাথায় এসেছে আমার এখানে মানুষ চিনতে হবে। পরিচিত হতে হবে। এখন ফ্যাশন উইক চলছে। আমি একজন মডেল এসেছি। আমি কাজ না করে কিভাবে যাই। আমি অবশ্যই কাজ করবো এখানে। প্রথম দিনই আমার লুসি নামে একজনের সাথে পরিচয় হয়। লুসি আমাকে বলে সে এই ব্র্যান্ডটির সাথে কাজ করে। সে আমাকে বলে ওর সাথে ওর ব্র্যান্ডটার সাথে ওর শো’টা আমাকে দেখতে যেতে। ও’ই আমাকে মিলান ফ্যাশন উইকের নেবার ব্যবস্থা করে দেয়। ওই কো অর্ডিনেটর থাকে। ও’ই ম্যানেজমেন্টে থাকে। শো’টা আসলে ওরই। ও’ই আমার পাস ম্যানেজ করে দেয়। এভাবে আমার মিলান ফ্যাশন উইকে যাওয়া হয়। এভাবেই আমি মিলান ফ্যাশন উইকে পার্টিসিপেট করি। আর প্যারিসেরটা তো বললামই। প্যারিসে যাবার আগেই আমি প্যারিসের ব্র্যান্ডের জন্য শ্যুট করে গেছি। আমার আগে থেকেই কথা ছিলো যে প্যারিসে এসে তাঁদের সাথে দেখা হবে। ওরা বাংলাদেশের একটা ব্র্যান্ড ফেইস চায়। কারণ ব্র্যান্ডটা ফ্রান্স এবং বাংলাদেশের যৌথ।
তারপর ভিনি ভিসি ভিডি। সাংবাদিক, পরিচিতজন, বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে র্যাম্পে একইসাথে যাদের নিয়ে কাজ করেন তাদের অনুভূতিটা কী ছিলো? এমন কথার প্রেক্ষিতে আলিশা বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কয়েকজন জেনুইলি মন থেকে খুশি হয়েছেন। তারমধ্যে মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব, বাচসাসের প্রেসিডেন্ট রাজু আলীম একজন! উনি অনেক খুশি হয়েছেন। রাজু আলীম ভাইয়া তো আমি যখন ওখানেই ছিলাম তখনই আমাকে ফোনের ওপার থেকে উচ্ছসিত কন্ঠে বললেন আলিশা, এইটা কী করালা তুমি! আই ফিল সো প্রাউড অফ ইউ! সো প্রাউড অফ ইউ!
বাংলাদেশে আসার পর আজরা আপু ভিষণ খুশি হয়েছিলো। একচুয়েলি বাংলাদেশে আসার সাথে সাথেই আমার বাংলাদেশ ফ্যাশন উইকে পার্টিসিপেট করার কথা ছিলো। তখন আজরা আপুর সাথে দেখা হলো। তারপর ইমি আপু, তারপর মারিয়া আপু। ইমি আপু বলেছে ‘আলিশা জেনুইনলি খুশি হইছি কারণ তুই যখন আসছিন তখন দেখেই আমরা বুজছি যে তুই অনেক ভালো করবি। মানুষ দেখে বুঝে যায় কে ট্যালেন্টেড কে ট্যালেন্টড না।’
র্যাম্পের মধ্যে একটা বিষয় থাকে। র্যাম্পে তো সবাই হাঁটে। তবে স্টাইলের একটা বিষয় থাকে। প্রেজেন্সের বিষয় থাকে। সুন্দর একটা প্রেজেন্স দিয়ে অডিয়েন্সকে মুগ্ধ করে রাখার একটা বিষয় থাকে। আসার পরে আবার বাংলাদেশ ফ্যাশন উইক যখন হলো তখন সবার সাথে দেখা হলো। কমবেশি সবাই কংগ্রেচুলেট করেছে। কেউ কেউ এমন আছে যারা দেখে মনে হলো অতোটা খুশি না। কেউ কেউ আমাকে ব্লক করে দিলো। হয়না! অনেকে সাকসেস নিতে পরেনা!
একটু পেছনের দিকে তাকিয়ে র্যাম্পে হাঁটার শুরুর গল্প প্রসঙ্গে আলিশা বলেন, রাজু আলীমের দেয়া ভালোবাসার প্রজাপতি আমার প্রথম সিনেমা। এরপর থেকে আমার সিনেমা ক্যারিয়ার শুরু হয়ে যায়। জাজের সাথে আরেকটি সিনেমা করেছি। শাপলা মিডিয়ার সাথেও আরেকটি সিনেমা করেছি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য এমআর নাইন।
মাসুদ রানা আমরা বলিনা কারণ মাসুদ রানা নামে এর আগে একটি সিনেমা আছে। আমরা এমআর নাইন’ই বলি। খুব শিগগীরি এর ট্রেইলার আপনারা দেখতে পারবেন। ওটার ট্রেইলার দেখলাম। নিজেরাই। অসাধারণ। ফার্স্ট একটা হলিউড কম্বাইন্ড মুভি। চমৎকার লেগেছে। বাংলাদেশের মুভি যে এগিয়েছে তার একটি চিত্র দেখা যায় এই সিনেমাটিতে।
আরেকটি বিষয়, অনেকেরই একটু খারারপ লাগতে পরে বা হিংসা হতে পারে যে আমি প্যারিস ফ্যাশন উইক থেকে ঘুরে আসছি তবে আমার মনে হয় যে বাংলাদেশ থেকে আরো অনেকের এ ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্যাশন এরিনায় পার্টিসিপেট করা উচিত। ঘুরে আসা উচিত।
‘বাংলাদেশে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি খুব বেশিদিন ধরে শুরু হয়নি। কিন্তু আমাদের দেশে কয়েকজন আইকন আছেন। ছিলেন। যেমন বিবি রাসেল। যেমন কৌশিকী নাসের তুপা আরো কয়েকজন আছেন, যারা বিশ্বের লিডিং ব্র্যান্ডের সাথে কাজ করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে বলা যায় বাংলাদেশে অনেকগুলো সেক্টর পুর্ণাঙ্গ ভাবে তৈরী হয়নি, আবার হয়েছে। আমাদের দেশের সাংবাদিকরাও মিলান কিংবা অস্কারে গেছেন। যাচ্ছেন। কিন্তু তারপরেও এই ইন্ডাস্ট্রির কোথায় যেন কমতি আছে।
এই যেমন প্যারিস থেকে ঘুরে আসাটা অনেকে ঠিক মতো এক্সেপ্ট করতে পারেননি। বিশ্বের বড় বড় বিউটি এজেন্সিগুলো ইন্টেলেকচুয়াল এডুকেটেড লেডি তৈরী করেন। বর্তমান জেনারেশনে যারা আছে তারা ইন্টেলেকচুয়ালি স্মার্ট। প্রেজেন্টেবল এবং ফুললি ইন্টান্যাশনাল। কঠিন প্রতিযোগীতার পথটাতে এগিয়ে যেতে কতটা স্ট্রাগল করতে হচ্ছে সবাইকে’
এমন প্রশ্নের জবাবে আলিশা বলেন, মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশেই যখন আমি ছিলাম তখন আমার আশেপাশে সবাই গল্প করছিলো, আমরা যারা বসে আছি তাদের মধ্যেই কেউ মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ হয়ে বসে আছে। কিন্তু আমরা যে যেখানে ডিজার্ভ করেছি সে সেই জায়গাটাতেইে এসেছি। আমারও অনেকের সাথে প্রতিযোগিতা করেই এ পর্যন্ত আসতে হয়েছে। আমাকে কেউ বলে দেয়নি যে মিস ইউনিভার্সে আসতে হবে। কোন গ্রুমিং স্কুলেও ছিলাম না। এমনকি মিডিয়ার কাউকে চিনতামও না। আমার এই পথটুকু কিন্তু আমি নিজে নিজেই এসেছি। এ ক্ষেত্রে অনেক মানুষ সামনের দিকে আসতে চায়। আবার অনেকে সামনে এসেও সবাইকে টেনে ধরে রাখতে চায়। যেন সে আগাতে না পারে। অনেক সময় সুগার ড্যাডির কথা আসে। অনেকে রিউমার ছড়ায়, কাস্টিং কাউচের কথা আসে। সেইম ইস্যু কিন্তু কর্পোরেট সেক্টরেও থাকে। প্রমোশনের ক্ষেত্রে সবাই কিন্তু যোগ্যতায় পায়না। অনেকেই অনেক কিছুর বিনিময়ে পায়। কিছু কিছু মানুষ এমনটা করে, কিন্তু তাই বলে সবার জন্য এটা সেইম না। যারা নিজের ক্ষমতায় উঠতে পারে তারা নিজের ক্ষমতায় ওঠে আর যারা পরেনা তারা শুয়ে ওঠে।
মিস ইউনিভার্স রানার্স আপ হবার পরে কোন ব্র্যান্ডের সাথে কাজ করা জানতে চাইলে আলিশা জানান, অনেক। ভাসাবি, ভিভা, প্রেমস কালেকশন, টুয়েলভ, সোলাস্তা, নাবিলা, নেরোল্যাক, হুয়াওয়ে, ওপ্পো আরো অনেক।
অ্যাক্টর, মডেল, ফ্যাশন কুইন, চিত্রনায়িকা। বোন আবিলা ইসলাম এ প্রজন্মের আলোচিত ডিজে। মা’ও অনুপ্রেরণা দেন সামনে এগিয়ে যেতে। পারিবারিক ভাবে বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা এবং নিজের জীবন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে আলিশা বলেন’ আমার ফ্যামিলি অনেক ওপেন মাইন্ডেড। আমার বাবা মা’ই শুধু না। আমার দাদা দাদী, চাচা ফুপু খালা সবাই অনেক ফ্রি, অনেক ওপেন। কারণ আমার ফুল ফ্যামিলি এখনো দেশের বাইরে থাকে। দাদার সাইডের। নানার দিক এখানেই থাকে। ওদের কাছে এটি খুবই নরমাল বিষয়। তবে এটা ঠিক যে আমার ফুল ফ্যামিলি ইঞ্জিনিয়র বা ডাক্তার। এই ফ্যামিলির কেউই এই ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে নাই। আমার মা আমাকে সাপোর্ট করে, পছন্দ করে, পুশ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে। কিন্তু একটা সময় কিন্তু আমার মা সেরকম মডেলিং পছন্দ করতো না। মডেলিংয়ে অনেক নেগেটিভিটি, নিউজ এসব থাকে। প্রথম দিকে আমার মা ডিজেও ততটা পছন্দ করতেন না। তারপর আম্মুকে যখন বোঝালাম যে আম্মু দেখো, সব কাজই ভালো খারাপ থাকে। পুরোটাই নিজের ওপর ডিপেন্ড করে। আমরা ভালো থাকতে চাইলে ভালো থাকবো। তখন আম্মু আমাদের সাপোর্ট করে।
নিজের পরিবার প্রসঙ্গে আলিশা জানান, আমার বাবা ইমরানুল ইসলাম ইমরান। আমার আম্মুর নাম রুমানা পারভিন। আমার জন্ম হয় দিনাজপুরে। আমার বয়েস যখন ২ তখন আমি ঢাকায় চলে আসি। আমার আব্বু আম্মুর সেপারেশনের পর আমি পুরোপুরি আমার মায়ের কাছেই বড় হয়েছি। আমার একটাই স্কুল ছিলো। মেপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। আমি ও লেভেলস দেই ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে। তারপরই মালয়েশিয়াতে চলে যাওয়া হয় আমার ফাউন্ডেশনের জন্য। ফাউন্ডেশন করেছি আমি লিমককউইং ইউনিভার্সিটি অফ ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিতে। পড়াশোনাও ইনফরমেশন টেকনোলজিতে করেছি। আমার ফাউন্ডেশন শেষ। মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে আসছি এই ভেবে যে আইইএলটিএস করে কানাডাতে চলে যাবো। কিন্তু আইইএলটিএস শেষ করার সময়েই দেখি ওয়ার্ল্ড মিস ইউনিভার্সিটির একটা রেজিস্ট্রেশন চলছে অনলাইনে। রেজিস্ট্রেশনটা কমপ্লিট করলাম, পার্টিসিপেট করলাম এরপর এই শোবিজ ইন্ডাস্ট্রিটার একটু মজা পেতে পেতেই দেখি করোনা শুরু হয়ে গেছে। আর আমার স্টুডেন্ট ভিসা অফ হয়ে গেলো। আমার বাহিরে যাওয়া হলো না। তো আমার ওয়েল উইশার এবং কাছের সবাই বলছে, যেহেতু ক্যারিয়ারে হাই টাইম চলছে সেজন্য তাই স্টাডিটাও কমপ্লিট করে ফেলতে। ইনশাআল্লাহ স্টাডিটাও কমপ্লিট করে ফেলবো।
বাংলাদেশে শোবিজে পছন্দের তালিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার ফ্যাশনে আজরা আপুকে ভাল্লাগে। পিয়া জান্নাতুল আপুকে খুব ভাল্লাগে। ইমি আপুকে খুব ভালো লাগে। ছেলেদের মধ্যে আসিফ আজিমকে খুবই ভালো লাগে। আমি খুবই বড় ফ্যান তার। এরপর আজিমুদ্দৌলা আছে, আজমির আছে। নিবিড় নাহিদ আছে, ভালো কাজ করছে। এদের আমার ভালো লাগে। কাছের মানুষ লাগে। পাশের মানুষ লাগে। সিনেমা জগতে আছে আরেফিন শুভ। খুবই ভালো কাজ করেন। আমার একটু সিনিয়র মানুষদের ভালো লাগে। যেমন চঞ্চল ভাই আছেন। চঞ্চল চৌধুরী। মোশাররফ করীম। উনাদের অ্যাক্টিংটা রিয়েলিস্টিক লাগে। ভালো লাগে। খুবই পছন্দ তাদের অ্যাক্টিং স্কিলস। নায়িকার মধ্যে জয়া আহসানকে খুব ভালো লাগে। বাঁধন আছেন। উনাকেও আমার খুবই ভালো লাগে।
ভবীষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে আলিশা জানান, সম্প্রতি কলকাতায় বেস্ট মডেল অ্যাওয়ার্ড পেলাম আমি। কলকাতা বাংলাদেশ মিলিয়ে। এটা আমার খুবই প্রাউডে বিষয়, আমি খুবই হ্যাপি। এতদিনে আমার ম্যাচিওরিটি ছিলো কিন্তু ইন্ডস্ট্রির বিষয়ে আমার কম নলেজ ছিলো। এখন আমার নলেজটা আরো বড় হয়েছে। এখন আরো ভালো ভাবে আমি কাজ করতে পারবো বলে মনে করি।
জয়া আহসান, নুসরাত ফারিয়া, মিথিলার মতো তারকারা কলকাতা, মুম্বাইতে কাজ করছে। দেশের বাইরে বলিউড বা হলিউডে কাজ করার ইচ্ছার বিষয়ে তিনি বলেন, এতদূরে ইউরোপে যখন কাজ করে আসতে পেরেছি তখন আমার পাশের দেশে কাজ করার সৌভাগ্য হলে আমি অনেক খুশি হবো। সত্যি কথা বলতে এখনে একটা হিন্ট দিতে চাই। যখন কলকাতা গেলাম, কোলকাতা গিয়ে আমার মুম্বাইতেও যাওয়া হয়েছে। কিছু কাজের কথা বলা হয়েছে। সো দেখি। আমি প্যারিসে যাবার আগেও বলেছি যে বাংলাদেশের জন্য কিছু একটা করবো। এখানে আবারও বললাম। তো দেখি। ইন্টারন্যাশনালি পাশের দেশে থেকে আপনারা একটা আশা করতে পারেন যে তাদের সাথে আমার একটা কোল্যাবরেশন হতে পারে ফিল্মে।
দর্শকদের উদ্যেশ্যে আলিশা ইসলাম বলেন, অডিয়েন্সের জন্য আমি বলবো, ভালোবাসবেন দোয়া করবেন, আমার কাজগুলোর সঙ্গে থাকবেন। ভালোবাসার প্রজাপতি যে ছবিটা আমি করছিলাম, যেটা এখনো রিলিজ হয়নি কারণ কিছু সিকোয়েন্সের কাজ এখনো বাকি ছিলো। কিছু মিউজিক ভিডিওর কাজ বাকি ছিলো। সিনেমায় শুধু আমার গানের শ্যুটিংটা বাকি ছিলো। পপি আপুর অসুস্থতার কারণে তিনি একটু অনুপস্থিত ছিলেন। আমাকে দিয়েই ছবিটি শেষ হবে। আশা করবো আপনারা সবাই ছবিটি দেখবেন।