চৈত্রের শেষ দিকে যেন সূর্যের তাপে পুড়ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। তীব্র তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে দেশের অধিকাংশ এলাকায়। গরমে ছটফট করছেন সবাই। এই গরমে সুস্থ থাকতে আপনাকে মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম কানুন।
গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তীব্র গরমে স্বাস্থ্যের ওপরে যে প্রভাব পড়ে, এতে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া হিটস্ট্রোকের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি আরও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই নিচের পরামর্শগুলো মেনে চললে সুস্থ থাকা যাবে।
সরাসরি রোদে যাওয়া থেকে বা অধিক পরিশ্রম থেকে যতটুকু সম্ভব বিরত থাকতে হবে। বিশেষ করে বেলা ১১টা থেকে তিনটা পর্যন্ত সরাসরি রোদে না যাওয়াই ভালো।
সূর্যের আলো থেকে চোখ সুরক্ষার জন্য রোদচশমা ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া সূর্যের আলোয় সরাসরি যাওয়ার পরিবর্তে মাথায় ছাতা, টুপি, পায়ে জুতা-স্যান্ডেল ব্যবহার করলে অনেকটা গরম থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
যদিও রমজান মাস চলছে তাই পানি পানের সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে গরম থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি রাখতে হবে। আর যারা রোজা রাখছেন না তারা তৃষ্ণা না পেলেও প্রচুর পানি পান করবেন। পানি ছাড়াও ডাব, জুস, লাচ্ছি, লেবুপানি, দই প্রভৃতি খেতে পারেন। এতে শরীর আর্দ্র থাকবে।
গরমে সুস্থ থাকতে উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার অল্প অল্প খেতে হবে। কোথাও যাওয়ার আগে সঙ্গে পানি অবশ্যই নেবেন। সুযোগ থাকলে একাধিকবার গোসল করতে পারেন। বিশেষ করে, ঘুমানোর আগে গোসল করে দিলে শরীরের তাপমাত্রা কম থাকবে।
পোশাক পরিধানে হালকা, ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের সুতি কাপড় বেছে নিবেন। ঘর যাতে ঠান্ডা থাকে এবং ঘরে যাতে বাতাস প্রবেশ করতে পারে, সে সুযোগ রাখবেন।
গরমকালে কারও যদি শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা ও মাথা ঝিমঝিম করে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া এ সময়ে খাবার সামান্য এদিক-ওদিক হলেই পেটব্যথা হয়, পেট কামড়ায়, হজমে গোলমাল দেখা দেয়। তাই বাইরের খাবার খাওয়ার আগে সচেতন থাকুন।
গরমের সবার মাঝে বেশি ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। তাই এ সময়ে বাইরের খোলা খাবার ও পানীয় গ্রহণের হার বেড়ে যায়। তার ওপর গরমে সহজেই খাদ্যদ্রব্য দূষিত হয়। বাড়ে মাছি ও পোকামাকড়ের বিস্তার, যা রোগবালাই ছড়াতে সাহায্য করে। এসবের ফলে বাড়ে পানি ও খাবারবাহিত রোগের প্রকোপ। এর মধ্যে একটি বড় সমস্যা হলো জন্ডিস। জন্ডিস থেকে বাঁচতে, বিশেষ করে রাস্তার খোলা খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।
আরেকটা বড় সমস্যা হলো গ্রীষ্মের অতিরিক্ত গরমে ঘামাচির অত্যাচার বাড়ে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অতিরিক্ত গরমে প্রচুর পানি পান করা উচিত। প্রতিদিন কমপক্ষে দুবার গোসল করা প্রয়োজন। প্রতিদিন অন্তত একবার গোসলের সময় সাবান মাখতে হবে। ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে।
গরমকালে স্বাস্থ্যগত অনেক ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। এ সময়ের একটি মারাত্মক স্বাস্থ্যগত সমস্যার নাম হিটস্ট্রোক। চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী, প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে তাকে হিটস্ট্রোক বলে।
হিটস্ট্রোক এড়াতে যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকতে হবে। পানির সঙ্গে সঙ্গে লবণযুক্ত পানীয়, যেমন: খাবার স্যালাইন, ফলের রস, লাচ্ছি ইত্যাদিও পান করতে হবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারী পানীয়, যেমন: চা ও কফি যথাসম্ভব কম পান করা উচিত। গরমে প্রচুর সবজি খেতে পারেন। শসা, টমেটো, ক্যাপসিকাম, লাউ, শাক-পাতা আপনার খাদ্যতালিকায় রাখুন। সংবাদের তথ্যসূত্র: জিনিউজ, বারডেম।