ফাইল ছবি
ধর্ম ডেস্ক :ওমরা অনেক ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘এক ওমরার পর আরেক ওমরা, উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহের কাফফারা। আর জান্নাতই হজে মাবরুরের একমাত্র প্রতিদান।’ (সহিহ মুসলিম: ১৩৪৯)
জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) আরও ইরশাদ করেছেন- ‘হজ ও ওমরাকারীগণ আল্লাহর প্রতিনিধি দল। তারা দোয়া করলে তাদের দোয়া কবুল করা হয় এবং তারা কিছু চাইলে তাদেরকে তা দেওয়া হয়।’ (মুসনাদে বাজজার: ১১৫৩; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৫২৮৮; তবারানি: ১৭২১)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হজ ও ওমরাকারীগণ যখন দোয়া করে, তাদের দোয়া কবুল করা হয়। তারা যখন কারো জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে তাদেরকে ক্ষমা করা হয়। (ইবনে মাজাহ: ২৮৯২; নাসায়ি: ৫/১১৩)
ফজিলতের দিক বিবেচনায় ওমরা পালনের সর্বোত্তম সময় পবিত্র রমজান মাস। এই মাসে ওমরার ফজিলত সবচেয়ে বেশি। হাদিস অনুযায়ী, রমজানের ওমরায় হজের সওয়াব পাওয়া যায়। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (স.) এক আনসারি নারীকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে হজ করতে তোমার বাধা কিসের? ইবনে আব্বাস (রা.) নারীর নাম বলেছিলেন; কিন্তু আমি ভুলে গেছি। ওই নারী বলল, ‘আমাদের একটি পানি বহনকারী উট ছিল; কিন্তু তাতে অমুকের পিতা ও তার পুত্র (অর্থাৎ নারীর স্বামী ও ছেলে) আরোহণ করে চলে গেছেন। আর আমাদের জন্য রেখে গেছেন পানি বহনকারী আরেকটি উট, যার দ্বারা আমরা পানি বহন করে থাকি। নবী (স.) বলেন, আচ্ছা, রমজান এলে তখন ওমরা করে নিয়ো। কেননা রমজানের একটি ওমরা একটি হজের সমতুল্য।’ (বুখারি: ১৭৮২)
নিরিবিলিতে একটু আরামদায়ক ওমরার জন্য ডিসেম্বরের শুরু থেকে পুরো ফেব্রুয়ারি মাস উপযুক্ত সময়। এই সময় মক্কায় আবহাওয়া তুলনামূলক শীতল থাকে, যা ওমরা পালনের জন্য আরামদায়ক হতে পারে। এই সময়ে লোকসমাগমও কিছুটা কম থাকে। এই মৌসুমে অধিক নিরিবিলি ও শীতল পরিবেশে ওমরা করতে চাইলে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ১০টা এবং রাত ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত সময় বেছে নিতে পারেন।
এছাড়া হজের মৌসুমের পর মহররম থেকে শাবান—এই সময়ে সাধারণত মক্কায় তীর্থযাত্রীদের সংখ্যা কম থাকে, ফলে শান্তিপূর্ণভাবে ওমরা করা যায়।
কিছু বিশেষ দিন বা রাত যেমন শবে বরাত ও শবে কদরের রাতে লোকসমাগম বেশি হতে পারে। তাই এই সময় ওমরা করলে স্বাভাবিকভাবে প্রচণ্ড ভীড়ের মধ্যে ওমরা সম্পন্ন করতে হবে। আসলে আপনার সময়সূচি ও ব্যক্তিগত অবস্থা বিবেচনা করে, আপনাকে সবচেয়ে উপযুক্ত সময় বেছে নিতে হবে। আর ফজিলতের দিক চিন্তা করলে রমজান মাসে করতে হবে।
তবে, ওমরার জন্য নির্দিষ্ট সময় নেই। শুধু হজের মৌসুমে বা জিলহজ মাসের ৯-১৩ তারিখ পর্যন্ত পাঁচ দিন ওমরা করা মাকরুহ। অন্য যেকোনো দিন ওমরা করা যায়। নবীজি (স.) সামর্থ্যবানদের বেশি বেশি ওমরা করতে উৎসাহিত করেছেন। এক হাদিসে নবীজি বলেছেন, ‘তোমরা ধারাবাহিক হজ ও ওমরা আদায় করতে থাকো। এ দুটি আমল দারিদ্র্য ও গুনাহ বিদূরিত করে দেয়। যেমন—ভাটার আগুনে লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা-জং দূরীভূত হয়ে থাকে। (তিরমিজি: ৮১০)
হজের সময় ছাড়া অন্য যেকোনো সময় পবিত্র কাবাঘরের তাওয়াফসহ নির্দিষ্ট কিছু কাজ করাকে ওমরা বলে। ওমরা পালনে প্রধানত ৪টি কাজ করতে হয়। এর মধ্যে দুইটি কাজ ফরজ— ১. ইহরাম পরিধান করা। ২. পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ করা। আর দুইটি কাজ ওয়াজিব— ১. সাফা ও মারওয়া সাতবার সাঈ করা। ২. মাথার চুল মুণ্ডানো বা ছোট করা।